নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে ব্যাপকভাবে। কিন্তু ঢাকার বাইরে ট্রাইব্যুনাল চালু না হওয়ায় বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। কারণ, মামলা হলেই তাদের ঢাকা আসতে হচ্ছে। সারাদেশে ট্রাইব্যুনালগুলো দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, শিগগিরই সাইবার ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে। জানা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সংঘটিত অপরাধের মামলা নিষ্পত্তির জন্য ২০১৩ সালে ঢাকায় একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল হয়। সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছর জানুয়ারি মাসে সাতটি বিভাগীয় শহরে আরও সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে এসব ট্রাইব্যুনালে গত আট মাসেও কোনো বিচারক নিয়োগ হয়নি। ফলে একজন ব্যক্তিকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করতে হলে ঢাকায় আসতে হচ্ছে। বিচার প্রার্থীদের ভোগান্তিও বাড়ছে। এজন্য শিগগির এখানে বিচারক নিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বিচারক নিয়োগে বিলম্ব হচ্ছে। তবে শিগগিরই নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। আইনে আছে, একজন জেলা জজ পদমর্যাদাসম্পন্ন বিচারক থাকবেন এই ট্রাইব্যুনালে। জানা গেছে, জানুয়ারিতে গঠিত সাতটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল হলো- চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। জনবল নিয়োগে ইতোমধ্যে কিছু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালগুলোর কাজ শুরু হলে কাউকে মামলা করার জন্য ঢাকায় আসতে হবে না। দুর্ভোগ কমবে। এদিকে দেশে সাইবার ক্রাইমের ঘটনা বেড়েই চলেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ-সংক্রান্ত মামলার সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।
সাধারণত ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপের ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ব্লগ মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্নীল ছবি ও ভিডিও আপলোড এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়ে থাকে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সারা বিশ্বে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ সাইবার অপরাধ। এসব মামলা নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরে ট্রাইব্যুনাল দ্রুত চালু করা দরকার। আদালত-সংশ্নিষ্টরা জানান, সাইবার ক্রাইমের মামলাগুলো দায়ের করার সময় তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করা হয় না। এর অধিকাংশ মামলাই ভিত্তিহীন বা ভুয়া। পূর্বশত্রুতাবশত প্রতিপক্ষকে হেনস্থা করতে এসব মামলা করা হচ্ছে। অদক্ষ তদন্ত কর্মকর্তা দিয়ে মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। ফলে দুর্বল মামলাগুলো খারিজ হয়ে যাচ্ছে।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি নজরুল ইসলাম শামীম জানান, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১২৪টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরমধ্যে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৩৫টি মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ৮৯টি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন। এছাড়া, অভিযোগ গঠনের শুনানির দিনে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ২০০টিরও বেশি মামলার আসামি।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন থানা থেকে বিচারের জন্য সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট মামলা এসেছে দুই হাজার ৬৪২টি। এছাড়া, সরাসরি ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা হয়েছে এক হাজার ৮২টি মামলা। জানা গেছে, এই এক হাজার ৮২টি মামলার মধ্যে ৪৪৭টি বিভিন্ন সংস্থাকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি ৬৩৫টি মামলায় প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় আদালত খারিজ করে দেন। তদন্তাধীন ৪৪৭টি মামলার মধ্যে ১৫০টির তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে আদালতে জমা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা মোট দুই হাজার।
Leave a Reply